নাসির উদ্দিন, গলাচিপা : সরকারি নিয়ম কানুন উপেক্ষা করেই গলাচিপা উপজেলায় একের পর এক গড়ে ওঠছে ইটভাটা। এসব ভাটাগুলোয় ইট পোড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। কোথাও লোকালয়ে, কোথাও স্কুলের পাশে আবার কোথাওবা সরকারি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখল করে। ভাটা থেকে সরাসরি কার্বন মনোঅক্্রাইড গ্যাস বাতাসে মিলে যাওয়ায় আশপাশের এলাকার মাবনদেহে সৃষ্টি হচ্ছে নানা রোগের, মরে যাচ্ছে ভাটার আশপাশের গাছপালা, এছাড়া আশেপাশের জমিতে করা যাচ্ছেনা কোন ধরনের চাষাবাদ । এতে করে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে পরিবেশ। এসব ভাটায় কাজে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে কোমলমতি শিশু শ্রমিকদেরকে।
এলাকার প্রভাবশালীরাই এসব ইট ভাটার মালিক। গত বছর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কয়েকটি ইটভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রত্যেক ইটভাটার মালিককে ২ লাখ টাকা করে জরিমানা করেন। এ বছর ফের অবৈধভাবে ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ চললেও প্রশাসনের নেই কোন তৎপরতা। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সরকারি নিয়ম কানুন উপেক্ষা করে এসব স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়ার দাবি করেছেন সচেতন মহলসহ পরিবেশবাদীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গলাচিপা উপজেলায় ধানী জমিতে, স্কুলের পাশে এবং সরকারি ও পাউবো’র জমিতে গড়ে ওঠা এসব ভাটা তৈরিতে মানা হচেছ না কোন সরকারি নিয়ম কানুন। ভাটা থেকে নির্গত ধোয়া সরাসরি বাতাসে যাতে বেরোতে না পারে এ জন্য সরকার নির্ধারিত জিগঝাগ পদ্ধতিতে পানির ট্যংকি দিয়ে পরিশোধনের বিধান ও ধোয়া নির্গমনের জন্য ৬৫ ফুটের চোঙ্গা ব্যাবহারের বিধান থাকলেও জিগঝাগ তো নয়ই ৬৫ ফুটের বদলে ২৫ ফুট চোঙা ব্যবহার করা হচ্ছে এসব ভাটা গুলোতে। তাও আবার ড্রাম শিট দিয়ে এসব ভাটার চোঙা নির্মান করা হয়েছে। কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো সর্ম্পূণ নিষিদ্ধ হলেও একটি ভাটা ছাড়া অন্য সব ভাটায় ইট পোড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, গলাচিপার ইটভাটাগুলোতে বছরে ১ লাখ মনের বেশি কাঠ পোড়ানো হয়।
সরেজমিন গজালিয়া ইউনিয়নের ইছাদি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় এমন একটি ইটভাটা। স্থানীয়রা জানান, এ ইটভাটার মালিক ওই ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন খান। তার ইট ভাটাটি করা হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ও সরকারি খাস জমিতে। স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তা এর সত্যতা স্বীকার করেছেন। দেখা গেছে, ভাটায় কাঠের কয়েকটি বিশাল স্তুপ। স্থানীয়রা ধারনা করছেন এসব স্তুপে ১০ হাজার মনেরও বেশি কাঠ রয়েছে। এ ভাটার কোথাও পাথর কয়লার সামান্য সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এ ভাটার কাছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, বাজার ও অনেক বাড়ী-ঘর রয়েছে। ওই এলাকার আনোয়ার হোসেন খান এ ভাটা বন্ধের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বন ও পরিবেশ সচিব বরাবরে লিখিত আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত মেলেনি কোন প্রতিকার।
ভাটার মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন খান এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
এছাড়া সুহরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রতনদি তালতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বাঁশবাড়িয়া হাজী সামসুদ্দিন মোল্লা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে ৩টি ইটভাটা। এদিকে পরিবেশ অধিদফতরের এসব দেখভাল করার দায়িত্ব থাকলেও পটুয়াখালী জেলায় আজ পর্যন্ত স্থাপিত হয়নি এ দফতর। ফলে পার পেয়ে যায় অবৈধ ইটভাটার মালিকরা।