ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
পটুয়াখালী পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা রিটার্নিং অফিসার খান আবি শাহানুর খান এর বিরুদ্ধে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তথ্য গোপনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। আসন্ন পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্ব একাধিক প্রার্থী এমন অভিযোগ এনেছেন। যার ফলে হলফনামায় তথ্য গোপন করে মনোনয়ন দাখিল করা সত্বেও আবুল কালাম আজাদ নামের এক প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা করেছেন তিনি। কালক্ষেপন করে ব্যাংকের চিঠি গ্রহণ না করা এবং একজন জনপ্রতিনিধির সাথে এক মেয়র প্রার্থীকে নিয়ে নির্বাচন অফিসে রুদ্ধতার বৈঠকের বিষয়টি নিয়েও শহরমহয় জুড়ে নানা ধরনের গুঞ্জন রয়েছে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, আগামী ৯ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য পটুয়াখালী পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ দিনে গত ১৫ ফেব্রæয়ারী জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন দাখিল করেন পটুয়াখালী শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ। তিনি বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ এর আপন বড় ভাই। আবূর কালাম আজাদ তার হলফনামায় দায় দেনা সমূহের প্রকৃতি ও বর্ণনার কলামে ইসলামী ব্যাংক লিমিটিডে পটুয়াখালী শাখায় ১শত ৫ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার টাকা, যমুনা ব্যাংক লিমিটেড ঢাকার ধানমন্ডি শাখা থেকে ৩ কোটি ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৮২৫ টাকা এবং পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড পটুয়াখালী শাখায় ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণের পরিমান উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ওইদিনই অর্থাৎ গত ১৫ ফেব্রæয়ারী খেলাপী ঋণের ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা উল্লেখ করে পটুয়াখালী পদ্মা ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক একটি চিঠি দিয়েছে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। অথচ আবুল কালাম আজাদ তার হলফনামায় উল্লেখ করেছেন ৯ কোটি ৫০ টাকা। যা ব্যাংকের সাথে হলফামায় ১৫ কোটির টাকা বিশাল ব্যবধান। এরপরও নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের হলফনামা বৈধ ঘোষনা করায় তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তার পক্ষপাত মূলক আচরনে সংক্ষুদ্ধ হয়ে আপীল মোকাদ্দমা দাখিল করেছেন অপর মেয়র প্রার্থী ডাঃ মোঃ শফিকুল ইসলাম।
প্রতিদ্ব›িদ্ব মেয়র প্রার্থীরা জানান, নির্বাচন অফিসার একজন কড়া মেজাজের লোক। তার সাথে আমরা কেবান বিষয়ে আলাপ করতে গেলে কন্কট ভাষায় কথা বলেন। আমরা ভোটার তালিকাসহ নির্বাচন সংক্রান্ত কোন বিষয় নিয়ে আলাপ করতে চাইলে তিনি সময় দেননা অথচ বর্তমান মেয়র (মেয়র প্রার্থী) মহিউদ্দিন এবং তার ব্যবসায়িক পার্টনার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে অহরহ নির্বাচন অফিসে নির্বাচন কর্মকর্তার রুমে ঘন্টার পর ঘন্টা রুম আটকিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে। এমন কি সংবাদকর্মীরাও তখন তার রুমের সামনে গিয়ে অনেক্ষন দাড়িয়ে থেকে কথা না বলতে পেরে ফিরে এসেছে-এমন তথ্যও সংবাদকর্মীরা আমাদেরকে জানিয়েছেন।
একাধিক প্রার্থীরা জানান, দুই সহদর মেয়র প্রার্থীর কাছ থেকে মোটা অংকের আর্থিক সুবিদা নিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা তাদেরকে বৈধতা দিয়েছে। আমরা এই নির্বাচন কর্মকর্তার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শংসয় আছি। বিষয়টি আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহোদয়কেও লিখিতভাবে অবগত করেছি।
এদিকে নির্বাচনী হলফ নামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ সম্পর্কে মেয়র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘আমি কিছুই জানিনা। হলফনামা ওরা লিখে নিয়েছে, আমি শুধু স্বাক্ষর করে দিয়েছি’। ওরা কারা এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল কালাম আজাদ জানান, ভাই আমি কিছু জানিনা। এখন একটু ব্যস্ত আছি, রাখি। এই বলেই ফোনের লাইন কেটে দেন।
মেয়র প্রার্থীর হলফনামায় তথ্য গোপনের বিষয়ে জেলা রিটার্নিং অফিসার খান আবি শাহানুর খান বলেন, ‘এ ব্যাপারে আপিল করা হয়েছে। এখন ওটা আপিলকারী কর্তৃপক্ষের বিষয়। আমার সাবজেক্ট শেষ’। এছাড়া মোটা অংকের টাকার বিনিময় তথ্য গোপনের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে বলে বলেন, এটা মিথ্যা ভিত্তিহীন।
আপিলকারী কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসক মোঃ নূর কুতুবুর আলম বলেন, আপীল মোকদ্দমা নিস্পত্তি¡র জন্য ২০ ফেব্রæয়ারী তারিখ র্নিধারন করা হয়েছে। শুনানীর জন্য প্রত্যেককে আলাদা আলাদা সময় দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ৯কোটি বা ২৪ কোটি টাকার কোন বিষয় না। মিথ্যা বা ভুল তথ্য দিয়ে এফিডেভিট দিলে তার প্রার্থীতা বাদ, এটাই সত্যি। আমি যদি দায়িত্বে থাকতাম তাহলে রিটানির্ং অফিসারকে বলতাম, ‘ওটা (মনোনয়ন) বাদ’। আর ঋনগ্রহীতার জামিনদারও যদি প্রার্থী হয়ে থাকে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তাহলে তারও (জামিনদার) মনোনয়ন বাদ। এদের দুইজনের মনোনয়ন বৈধ হবার কোন সুযোগই নাই যুক্ত করেন এম সাখাওয়াত হোসেন। প্রশ্ন ছিল জেলা নির্বাচন অফিসার বৈধ ঘোষনা করলো কিভাবে ওই দুই প্রার্থীকে? জবাবে এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, ব্যাংকের চিঠি পাওয়ার পরও যদি কোন প্রার্থীকে বৈধ ঘোষনা করেন তাহলে তার (রিটার্নিং অফিসার) চাকুরিই থাকার কথা না।
#